
কাশ্মীর, পানিবন্টন সহ সব বিরোধপূর্ণ ইস্যুতে বৃহত্তর আলোচনার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি বুধবার শিয়ালকোটে পাসরুর ক্যান্টনমেন্টের ফ্রন্টলাইন সফরে গিয়ে এসব কথা বলেন। পাকিস্তানের ভিতরে ভারতের হামলার জবাবে ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন মারসুস’ পরিচালনাকে উদাহরণমুলক জবাব হিসেবে আখ্যাযিত করেন তিনি। তবে এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন তিনি। ভারতে পাকিস্তানের হামলাকে তিনি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভারতের ভূমিকার প্রতিশোধ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সেনাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়েছেন। এখন পুরো জাতি আপনাদের সঙ্গে। এ সময় তিনি ভবিষ্যতে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সতর্ক করে দেন।
তিনি বলেন, যদি আমাদের ওপর আবার হামলা হয়, তাহলে আপনারা সবকিছু হারাবেন। আমরা একই সঙ্গে যুদ্ধ ও আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এর মধ্যে কোনটা বেছে নেবেন পছন্দ আপনাদের। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
শেহবাজ শরীফ আরও বলেন, আমাদেরকে নির্দেশনা দেবেন না। পানি আমাদের রেড লাইন। আমাদের পানির গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়ে চিন্তাও করবেন না। হ্যাঁ, পানি আর রক্ত একসঙ্গে প্রবাহিত হয় না। আপনি আমাদের নিলম-ঝেলাম পানি বিষয়ক প্রকল্পে হামলা করেছেন। যদি সেখানে ক্ষতি বড় আকারে হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আপনাদের বাগলিহার ড্যাম সহ বড় ড্যামগুলো ধ্বংস করে দেবো। শেহবাজ শরীফ আরও একবার মতবিরোধ কমিয়ে আলোচনায় বসার জন্য মোদির প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, আসুন আগুন নিভিয়ে ফেলি। কাশ্মীর ও পানি ইস্যুতে একসঙ্গে আলোচনায় বসি। উল্লেখ্য, পেহেলগাম হামলার পর তড়িঘড়ি করে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই সিন্ধুর পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। গত সপ্তাহে ভারতীয় মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিশ^ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা বলেছেন, সিন্দু পানি চুক্তিতে এই চুক্তি স্থগিত করার কোনো ধারা নেই। এসব কথার উল্লেখ করে শেহবাজ শরীফ বলেন, পাকিস্তানে শিশু, নারী ও বয়স্কদের ওপর নগ্ন আগ্রাসন চালিয়েছে ভারত। তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করা লজ্জাজনক এবং আন্তর্জাতিক আইন, আদর্শ ও নৈতিকতার বিরুদ্ধ। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান পেহেলগাম হামলার একটি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিল। কিন্তু ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে সেই পথ পরিহার করেছে। কারণ, তারা যে অভিযোগ করেছে তা প্রমাণ করার কিছুই নেই তাদের হাতে।
একই দিন বুধবার তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা হ্রাসে মহাসচিবের নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এটা ছিল দুই নেতার মধ্যে গত দুই সপ্তাহে তৃতীয় ফোনকল। এ সময় ভারতের নেতৃত্ব থেকে উস্কানি ও জ¦ালাময়ী বক্তব্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শেহবাজ শরীফ। বলেন, এতে আঞ্চলিক শান্তি হুমকিতে পড়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ভারত পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করেছে। তারা এরই মধ্যে বলেছে, পাকিস্তান কাশ্মীরের কিছু অংশ অবৈধভাবে দখল করেছে। তা অবশ্যই তাদের ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ জোর দিয়ে বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলুশন অনুযায়ী শুধু জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হলেই দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই শান্তি নিশ্চিত হবে। ওদিকে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানান গুতেরেস। বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানিতে তিনি সমবেদনা প্রকাশ করে। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।